অন্যতম মানব আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন রহ.
আজ হতে একশো বছর আগে উপমহাদেশে একটা জ্ঞান সূর্যের অস্ত হয়েছিল। কিন্তু তার রেখে যাওয়া জ্ঞানের অস্ত হয়নি। শতবছর ধরে আলো দেখিয়ে যাচ্ছে। যতদিন পৃথিবীর সূর্য উদয় হবে,ঠিক ততদিন তার রেখে যাওয়া জ্ঞান প্রদীপ আলোর দিশারী হয়েই পথ দেখাবে।
উপমহাদেশের আকাশে যখন ওয়াহাবীজম, শিয়া কাদিয়ানী সহ বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, ঠিক সেই কঠিন সময়ে তার উদয় হয়েছিল। ইমাম আবু হানিফা যেভাবে জবরিয়া,ক্বদরিয়া,মুতাযিলা সহ বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের মুখোশ উন্মোচন করে পরাজিত করেছিল, ঠিক সেভাবেই তিনিও শিয়া,কাদিয়ানী, ওয়াহাবীজমের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দিয়েছিলেন।
এই মহান মনিষী পৃথিবীতে ছিলেন ৬৭বছর, ৫মাস,১৫দিন। ততদিনে লিখে ফেলেন ৭৪টির অধিক বিষয়ে প্রায়ো দেড় হাজার গ্রন্থ। তার লিখিত গ্রন্থের উপর এম.ফিল করেছেন ২৭জন গবেষক এবং পি-এইচ.ডি করেছেন ৩৬জন গবেষক। বার্মিংহাম ইউনির্ভাসিটি, উসমানিয়া ইউনিভার্সিটি, পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি জওহরলাল ইউনিভার্সিটি,আল-আযহার ইউনিভার্সিটি সহ বিশ্বের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে তার লিখিত গ্রন্থ পড়ানো হয়।
তিনি দৈনিক ৫৬ পৃষ্ঠা করে লিখতেন। জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে যাবার আগেই লিখে ফেলেছিলেন 'দশলক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার আটশত তেতাল্লিশ' পৃষ্ঠা!
তার লিখিত সবচেয়ে বড় গ্রন্থের নাম 'ফতোয়ায়ে রিজভীয়্যাহ'! যা ত্রিশ খন্ডে বিভক্ত ও পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১,৬৫৬..যেখানে প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ছিল ৬,৮৪৭টি। ফতোয়া ছিল লক্ষাধিক। তাকে বলা হয় ফিকহে হানাফীর ইনসাইক্লোফিডিয়া তথা বিশ্বকোষ। ড. আল্লামা কবি ইকবাল বলেছিলেন, তিনি যুগের ইমাম আবু হানিফা।
ওয়াহাবীজমের ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থের নাম 'হুসামুল হেরামাঈন'! এটা তিনি লিখেছিলেন হেরেম শরীফে বসেই। যেটাতে স্বাক্ষর করেছেন মদিনা শরীফের বিখ্যাত ত্রিশজন মুফতি। তিনি ছিলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ তথা সমাজ সংস্কারক।
তিনি নবী প্রেমে লিখেছিলেন 'হাদায়েকে বখশিশ' নামক বৃহৎ এক কলেবরে কাব্য সংকলন। মিথ্যা নবুয়্যত দাবীকারী মির্জা আহমদ কাদিয়ানীকে খন্ডন করেছেন 'খতম নবুয়্যত' নামক ছোট্ট গ্রন্থ দিয়ে।
তিনি মূলত ছিলেন বাতিল- ভ্রান্ত মতবাদের যমদূত। নবীপ্রেমে মাতোয়ারা।
এই মহান মনীষীর নাম ইমাম আহমদ রেযা। যিনি আলা হযরত নামেই বেশি প্রসিদ্ধ। আজ হতে সহস্র বছর পরও তাকে স্মরণ করা হবে তার জ্ঞান প্রদীপের কারণে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন